আরে মিছির আলী চাচা নাকি? কেমন আছেন? আপনি এখন কি নিয়ে গবেষণা করছেন চাচা?
চলেন
হিমু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে মিসির আলী চাচার দিকে। কিভাবে সম্ভব গাছের সাথে কথা বলা! অতি উত্সাহে জানতে চাইলে সেও গল্প করতে পারবে কি না?
এই টুলু দূই কাপ চা দাও; চিনি বেশি করে দিও।
নারে হিমু; আমার বয়সে। সুগার লেভেল নেমে গেলে ব্রেইন কাজ করে না।আজ তোকে মজার একটা জিনিস দেখাবো। চল চা খেয়ে আমরা আজিমপুর যাবো। ওখানে কতগুলো গাছ আমার পরিচিত। সন্ধ্যার দিকে পৌঁছাতে পারলে তাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করা যাবে।
চাচা আপনি চিনি বেশি খাবেন কেনো? নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। বয়স তো বাড়ছে না কি!
গাড়িতে যেতে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা লাগলো। তখনো সূর্য ডোবে নি। হয়তো একটু পরেই মাগরিবের আজান দিবে।
হঠাৎ করেই যেন সবকিছু থমকে গেল। মনে হচ্ছে বাতাস ও ভারী হয়ে উঠেছে । শুনশান নীরবতা । হিমু একটু ভয়ই পেল প্রথমে। মাথার উপর থেকে ভারী গলায় আওয়াজ এলো
হিমু কেমন আছো? তোমাকে তো আমরা সবাই চিনি। তবে তোমার গায়ে আজ হলুদ পাঞ্জাবি না থাকায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
দেখ রে আম্রবৃক্ষ আজ কাকে নিয়ে এসেছি; এর নাম হিমু। তোদের সাথে কথা বলতে চায়।
কে বললো? আমরা দেখো আকাশের দিকে হাঁটি; আবার মাটির নিচে ও বড় হই।
কেন না ? আমরা তো তোমাদের মতোই জীবন্ত।
মনে হলো বিশাল এই আম গাছটা নড়েচড়ে উঠলো আর তার ডানে-বামে ঘুরে ডেকে তুললো কাঁঠাল, জামরুল আর বট গাছ গুলোকে।
আমাদের মতো তো তোমরা হাঁটতে পারো না, কাঁদতে পারো না। এমনকি খেতেও পারো না।
আচ্ছা তোমারা সবাই কথা বলতে পারো?
আমাদের কাটলে, ডাল ভাংলে কিংবা পাতা ছিড়লে তো ব্যথা পাই আর কান্না করি। ধরে দেখনি আমাদের কান্নার পানি? আমরা সূর্যের আলো দিয়ে রান্নাও করি। সবুজ পাতার মাঝে ক্লোরোফিল আমাদের মশলা আর শিকড় দিয়ে মাটি থেকে পানি নিয়ে আসে আমাদের কান্ড।
মিসির আলী চুপ করে আছেন। হিমু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া হিমুর ঘোর কাটিয়ে চলে গেল।
হিমু তুমি জানো আমরা ছাড়া ও ওদের আরো কত বন্ধু আছে? পৃথিবীর বেশীর ভাগ প্রানীর খাবার ই তো আসে তাদের থেকে। অনেক পাখির বাসা ও তো গাছে হয়।
আচ্ছা তোমাদের তো কোন বন্ধু নেই। ইচ্ছা করলেই কাউকে তোমরা উপকার করতে পারো না তো।